শিরোনাম :
৩ ইসলামী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্তের আদেশ বাতিল বিএনপি রাজনীতিতে নতুন কোনো মাত্রা যোগ করতে পারছে না: ওবায়দুল কাদের আফগানিস্তানে এক মসজিদে হামলা, নিহত ৬ ফরিদপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যালাইন ও গামছা বিতরণ  শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা শ্রীবরদীতে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির জন্যে নামাজ আদায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের অব্যাহতি প্রত্যাহার নেত্রকোনার মদনে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন  ফের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীব গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে আওয়ামী সরকারের নীল নকশা থামছে না: রিজভী
গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ধান-চাল সংরক্ষণের বাঁশের তৈরী গোলা 

গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ধান-চাল সংরক্ষণের বাঁশের তৈরী গোলা 

শাহরিয়ার কবির আকন্দ :গাইবান্ধা র পলাশবাড়ী উপজেলার গ্রামাঞ্চলে ধান-চাল সংরক্ষণের বাঁশের তৈরী বড় পাত্রের নাম গোলা। এটি গাইবান্ধা অঞ্চলে ডুলি বা বেড় নামেও পরিচিত। বাঁশ দিয়ে এ গোলা তৈরী করা হয়। গ্রামের গূহস্থ‍্য পরিবার গুলো পুরো বছরের খাদ্যের সংস্থানে গোলায় ধান সংরক্ষণ করে থাকেন।
প্রতি ধানের মৌসুমে ধান মারাকাটি করে শুকিয়ে গোলাজাত করা হয়ে থাকে।প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে পুনরায় রোদে শুকিয়ে ধান ভেঙ্গে চাউলে রুপান্তর করা হয়। তবে বাজারে বিক্রি করার সময় নতুন করে আবার ধান শুকানোর আর প্রয়োজন পড়েনা।
এশিয়া মহাদেশে অন‍্যান‍্য ১৯ টি দেশের সাথে বাংলাদেশেও মানুষের প্রধান খাদ‍্য হচ্ছে ভাত। চাল রান্নার পর হয় ভাত। গোলা থেকে ধান নামিয়ে তা মেশিনে ভাঙ্গিয়ে তুলনামূলক অধিক ছোট পাত্রে রাখা হয় চাল। আর সেখান থেকেই চাল নিয়ে ভাত রান্না করা হয়। গোলা ভর্তি ধান না থাকলে এক সময় গ্রামের গূহস্থ‍্য পরিবার সেই বাড়ীতে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে সাদি পযর্ন্ত দিতে আগ্রহী হতো না। কথা এখনো গ্রামাঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফিরে।যাতে নষ্ট না হয় সে কারণে গোলায় ধান রেখে সেই গোলার মুখ মাটির লেপ দিয়ে বদ্ধ করে রাখা হয়।
আবার টাকার প্রয়োজন হলে গোলা থেকে ধান নিয়ে বাজারে বিক্রি করা হতো। সে সময়ের সমাজ ব‍্যবস্থা এখনকার মতো এত উন্নত ছিলনা। তখন চোর-ডাকাতের ভয়ে ধানের গোলায়ও স্বর্ণ ও টাকা পয়সা সংরক্ষণ করে রাখা হতো। ধান রাখার এ পাত্রকে গোলা বা বেড় দুই নামে আখ‍্যায়িত করার কারণও রয়েছে। বেড় অপেক্ষাকৃত গোলা মজবুত।
গোলা দীর্ঘদিন ব‍্যবহার করা যায়। বাঁশের তৈরী গোলা ব‍্যবহার দিন দিন কমে গিয়ে এখন শূণ্যের কোঠায়। কারণ আমাদের পারিবারিক বাঁশঝাড়গুলো ক্রমেই বসতভিটায় পরিণত হওয়ায় তা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বেশিরভাগ বাঁশঝাড় গ্রামের বিত্তশালীদের পাকা স্থাপনা,বহুতল ভবন নির্মাণে সহায়ক সামগ্রী হিসেবে ব‍্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বিত্তশালীরা চড়াদামে বাঁশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে। আর বাঁশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। একদিকে উৎপাদন কমে যাচ্ছে অপরদিকে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁশের তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশের দাম ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। গোলা তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।
তাই বর্ধিত মূল‍্যেয় উৎপাদিত গোলা বিক্রি করতে হচ্ছে। গোলা বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। একটি বড় গোলায় ৪০ থেকে ৫০ ও একটি ছোট গোলায় ২০ নুন্যতম ৩০ মন ধান সংরক্ষণ করা যায়।
তবে গূহস্থ‍্য পরিবার তাদের চাহিদানুযায়ী গোলা তৈরী করে থাকেন। তবে গোলায় ধান রাখলে অনেক সময় নানা সমস্যাতেও পড়তে হয় গৃহস্থ‍্য পরিবারগুলোকে। গোলায় ধান সংরক্ষণ করলে ইঁদুর ধান নষ্ট করে বেশ। গ্রামের প্রতিটি বসতবাড়ীতে ইঁদুরের উৎপাত বিদ্রূপ করে থাকে বেশি। ইঁদুরের প্রধান খ‍াদ‍্য ধান। গোলার ধান খেয়ে ইঁদুর মাটিতে ফেলে দেয়। গূহস্থ‍্যরা জানায়,ইঁদুরের হাত থেকে ধান রক্ষার জন‍্য সাম্প্রতিক সময়ে গোলার ব‍্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। বাঁশের তৈরী গোলার স্থান দখল করে নিয়েছে পাকা অথবা টিনের বা ইষ্টিলের ড্রাম।
টিনের ড্রাম ঘরের বাইরেও রাখা যায়। বাঁশের তৈরি ধানের গোলা বাইরে রাখলে চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া স্থায়িত্ব কম হওয়ায় অনেকে টিনের গোলা তৈরি করার ফলে বাঁশের তৈরি গোলার চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় বাঁশের তৈরি গোলার কারিগরও অনেক কমে গেছে। তাদের পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়ে দিয়ে অন‍্য পেশায় চলে গেছে। তাছাড়া এ পেশা মৌসুমী হওয়ায় অনেক কারিগর পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নতুন প্রজম্ন এ পেশায় আসতে তেমন আগ্রহী নয়।
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ী গ্রামে গোলা তৈরির কারিগর আফজাল ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ীর উঠানে কথা হয়। তারা পারিবারিকভাবে বাপ-দাদার আমল থেকেই গোলা ও বিভিন্ন বাঁশের তৈরী পণ্য হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন।
তারা জানান, এখন বাঁশের তৈরী গোলার চাহিদা অনেক কমে গেছে। ইতোপূর্বে কালীবাড়ী হাটে সাপ্তাহিক হাটবারে শতাধিক গোলা বিক্রি করতাম।এখন এর স্থলে ১০ থেকে ১৫ টি গোলাও বিক্রি হয় না। একটি বড় গোলা প্রায় ৮’শ টাকা থেকে ১ হাজার ও একটি ছোট গোলা ৫শ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি করা যায়।
এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। ফলে দীর্ঘদিনের এ পেশা ধরে রেখে পারিবারিক চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
কালীবাড়ী হাটে গোলা কিনতে আসা এক ক্রেতার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানান, মাচা তৈরি করে গোলায় ধান রাখলে সে ধান নরম পড়ে না। গোলায় ধান রাখলে চাউলও ভালো পাওয়া যায়। আমি গোলায় ধান রেখে উপরে শুকনো নিমের পাতা দিয়ে রাখি। একারণে জ্বরাপোকা বা ফুতি লাগে না। শুকনো ধান বারোমাস ভালো থাকে। গোলা অনেক বছর টেকে। কিন্তু টিনের বা ষ্টিলের ড্রাম বেশিদিন টেকে না। আর এর ভিতরে এক প্রকার গরম ধরে ধানের বা চালের গুনগতমান নষ্ট করে। আর যেকারণে এতোসব রোগের সৃষ্টি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




কপিরাইট © ২০২১ || দি ডেইলি আজকের আলোকিত সকাল - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত